পরিশ্রম আর দীর্ঘ কয়েক মাসের অপেক্ষার পর চলছে পাকা ধান কাটার কার্যক্রম। মাঠে মাঠে এখন কৃষাণ-কৃষাণীদের দারুণ ব্যস্ততা। চলছে ধান কাটা, মাড়াই ও সংরক্ষণের কাজ। এরই মধ্যে অনেক কৃষকের গোলাতেও বোরো ধান উঠতে শুরু করেছে। গ্রামীণ জনপদের বেশিরভাগ জায়গাতেই সকাল থেকে শুরু করে সন্ধ্যা পর্যন্ত পাকা ধান কর্তন, মাড়াই, ঝাড়াই, সেদ্ধ ও গো-খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত খড়-কুটো শুকাতে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষক-কৃষাণীরা।
রাজবাড়ী জেলার প্রতিটি উপজেলায় বিভিন্ন এলাকায় শুরু হয়েছে বোরো ধান কাটা ও মাড়াইয়ের মৌসুম। পদ্মা নদীর পাড় ঘেঁষা এই জেলার কৃষকরা এখন ধান কাটা ও মাড়াইয়ে ব্যস্ত। যা প্রাণচাঞ্চল্য এনে দিয়েছে গ্রামীণ জনপদে। আবহাওয়া অনুকূল ও বর্ষার পানিতে তলিয়ে না যাওয়ায় জেলায় এবার বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে বলে জানিয়েছেন কৃষক-কৃষাণীরা। সময়মতো বৃষ্টি, অনুকূল আবহাওয়া ও সঠিক পরিচর্যার ফলে ফলন ভালো হয়েছে। কৃষকরা বলছেন, খরচ তুলনামূলক কম হওয়ায় ও বাজারে ধানের ভালো দাম থাকায় তারা এবার ভালো লাভের আশা করছেন।
স্থানীয় কৃষক হাবিবুর সরদার বলেন, এবার ধানের ফলন বেশ ভালো হয়েছে। আমরা কম খরচে চাষ করে ভালো ফলন পেয়েছি। যদি বাজারে দাম ঠিক থাকে, তাহলে এই ধান আমাদের পরিবারের সচ্ছলতা আনবে। তিনি আরও বলেন, বোরো ধান আবাদ করতে জমিতে কোনও চাষ করতে হয় না। বর্ষার পানি চলে যাওয়ার পর বোরো ধানের চারা রোপণ করলে এই ধানের আবাদ শেষ হয়ে যায়। সুতরাং বোরো ধানে অনেক লাভ হয়। তবে আবহাওয়া অনুকূলে না থাকলে পুরো ধান নষ্ট হয়ে যায়।
গোয়ালন্দ উপজেলার উজানচর ইউনিয়নের কৃষক খবির মোল্লা বলেন, আমি এবার পাঁচ বিঘা জমিতে বোরো ধান আবাদ করেছি। প্রথম দিকে ঘন কুয়াশায় বীজতলার কিছুটা সমস্যা দেখা দিয়েছিল। তবে স্থানীয় কৃষি অফিসের পরামর্শে সে সমস্যা কাটিয়ে উঠতে পেরেছি। আলহামদুলিল্লাহ, ভালো ফলন হয়েছে।
এ সময় কুলসুম আক্তার নামের এক নারী কৃষক বলেন, রাজবাড়ী জেলা নদী ভাঙন কবলিত। প্রতি বছর এই জেলার অনেক আবাদি জমি নদী গর্ভে চলে যায়। তবে পদ্মা নদীর পাড়ে ও জেগে ওঠা চর এলাকায় প্রতি বছর বোরো ধান আবাদ করা যায়। এবার জেলায় প্রতিটি এলাকায় বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। খরচ কম হওয়ায় অনেক লাভবান হওয়ার আশা করছি। বদরুল শেষ নামের এক কৃষক বলেন, এবার ৫০ বিঘা জমিতে বোরো ধান আবাদ করেছি। ধানও অনেক ভাল হয়েছে। আমরা চার জন মিলে একত্রিত হয়ে বোরো ধানের আবাদ করেছি। আশা করছি, এবার ধান আবাদে ভালো লাভবান হবো।
রাজবাড়ী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, এবার জেলায় প্রায় পাঁচ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো ধান চাষ করা হয়েছে, যা গত বছরের তুলনায় ৩০ শতাংশ বেশি। রাজবাড়ী জেলার ধান এখন মাঠ থেকে ঘরে তুলতে শুরু করেছে কৃষকরা। স্থানীয় অনেক কৃষক বলছেন, বোরো ধানের আবাদ করা জমি বছরের বেশি সময় নদীর বুকে ডুবে থাকে। বছরে একবার সর্বোচ্চ আবাদ করা যায়। তাও আবার অনেক বছর বর্ষার পানিতে ডুবে যায়। বোরো ধান ঘরে ওঠানো অনেক ভাগ্যের ব্যাপার বলে তারা মনে করেন। খরচ কম হলেও বোরো ধানে ঝুঁকি বেশি। যে কারণে কৃষক বোরো ধান আবাদ করায় আগ্রহ পায় না।
রাজবাড়ী কৃষি সম্প্রসারণ উপ-পরিচালক শহিদুল ইসলাম বলেন, বোরো ধান মূলত নদীর পাড় এবং চর এলাকায় হয়ে থাকে। বোরো ধানের জমিতে চাষ করতে হয় না। বর্ষার পানি শুকিয়ে যাওয়ার পর বোরো ধানের চারা রোপণ করতে হয়। সুতরাং এই ধানে চাষ অনেক লাভবান হওয়া যায়।
বাংলাস্কুপ/প্রতিনিধি/এনআইএন